নিঃসঙ্গতা
আমি পৃথিবীতে একজন শিশু হয়ে মাতৃগর্ভে ভূমিষ্ঠ হয়ে এসেছি।নিজের আপনজন বলেছিলেন যে, ভূমিষ্ঠ হয়েই নাকি অনেক কান্না করেছিলাম। বিশ্বাস হয় নি।কিন্তু বড় হয়ে অনেক কিছুই জেনেছি,তাই কান্নার বিষয়টিও বিশ্বাস হয়েছে।এই কান্না যে মানুষকে সারা জীবন কষ্টের বোঝা হিসেবে বয়ে বেড়াতে হবে, তা জানা ছিল না।
আমি কারণে-অকারণে, সুখে-দুঃখে, আবেগে-কষ্টে জন্মলগ্ন হইতে কেঁদে আসছি।কাঁদতে কাঁদতে হয়ত ভেবেছিলাম, একদিন আর কাঁদতে হবে না। কিন্তু এখনো তা পূরণ হল না। এখনো কেঁদেই চলছি।
এখন শিশু থেকে পূরুষে রুপান্তর হয়েছি। পূরুষ মানুষ নাকি কাঁদতে জানেনা!! কিন্তু আমিতো সেই শিশুর মতো এখনো কান্না করি!! ছোটবেলা কান্না করতাম জোরে জোরে, কোন মানুষ দেখলে সেই কান্না'র আওয়াজ আরো বাড়িয়ে দিলাম, কারণটা ছিল, কারো কাছে হয়তো সহানুভূতি বা আদর পাওয়ার ইচ্ছায়।
কিন্তু এখন তো বড় হয়েছি, এখন কি আর ছোটকালের মত জোরে কান্না করা যায় !! কারণ, এখন আদর পাওয়ার কোন লোক বা ব্যক্তি নাই। নাই বলে এখন লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করি, যাতে কেও না জানে।।
আর জোরে কান্না না করতে পারলে কষ্ট'টা বুকের ভেতর আটকে থাকে।যার প্রভাব ব্যক্তি,পরিবার,আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব এর উপর প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।।
একজন ছেলে বা পূরুষ, ছেলে বেলা হইতে পরিবার হইতে কি প্রতিকূলতা নিয়ে বেড়ে উঠে, পরিবার, সমাজ সবাই তা জানে। নব্বই দশক হইতে একটি গরিব গারো খ্রীষ্টিয়ান পরিবারের ছেলেরা কিভাবে যে বড় হয়, তা হয়ত বলার প্রয়োজন নাই।
পরিবারের অভাব-অনটন নিয়ে স্কুলে যাওয়া, হোষ্টেলের নিয়ম শাসন, নিম্ন মানের খাবার, এইসব নিয়েই কত কষ্ট না হয়েছে জীবনে।
আজ বড় হয়েছি, বিয়ে করেছি, আগে পরিবারের সদস্য ছিলাম, এখন পরিবারের কর্তা হয়েছি! কষ্টের ধরণ যেন রুপ পরিবর্তন করেছে। আগে হয়তো কষ্টের কথা কারো কাছে শেয়ার করতাম না। কার কাছে করব? পরিবারের সাথে! পরিবারের কষ্ট যে আমার কষ্টের চাইতে অনেক বেশি! তাই বলা হয় নি। আর এখন যাকে বলতে চাই, আমার চাইতে তার কষ্টটাও যে বেশি।।তাই বলা হয় না পূরুষদের কষ্ট।।
মাত্র ১৩/১৪ বছর ছিলাম বাবা-মা,ভাই-বোনের সাথে একই ঘরে, একই চৌকিতে! সেই থেকে আজো পর্যন্ত অর্থ সুখ নামের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে..................................
চিত্র ঃ জুয়েল দিও |
Comments